বিশেষ সংবাদদাতা, কুতুবদিয়া:
নারী নির্যাতন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী আত্ম-স্বীকৃত জামায়াত ক্যাডারকে বড়ঘোপ ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেওয়ায় এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। সরকারী চাকুরীবিধি লংঘন করে বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ও বিতর্কিত জামায়াত ক্যাডার মোহাম্মদ আক্কাসকে উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দিয়ে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন নিয়োগ কমিটি। চরিত্রহীন এ জামায়াত ক্যাডারকে অবৈধভাবে উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেওয়ায় প্রতিষ্ঠানের নৈতিক শিক্ষা নিয়ে শঙ্কিত সচেতন আভিভাবক মহল।

মেয়াদ উত্তীর্ণ ও অবৈধ নিয়োগ বাতিল চেয়ে গত ৩ মে একই প্রতিষ্ঠানের সহকারী অধ্যাপক এবং নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী প্রার্থী মোহাম্মদ আওরঙ্গজেব বাদী হয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর‘র মহাপরিচালক, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও শিক্ষা সচিব এবং ২৭ আগষ্ট মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবরে লিখিত অভিযোগ প্রেরণ করেছেন। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৩০ জুলাই ২০১৭ তারিখে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের রেজিস্ট্রার কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কে সরেজমিনে তদন্ত পূর্বক সুস্পষ্ট মতামতসহ প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য লিখিতভাবে অবহিত করেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গেল বছরের ১৮ এপ্রিল কক্সবাজারের স্থানীয় “দৈনিক হিমছড়ি” পত্রিকায় কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া উপজেলাস্থ বড়ঘোপ ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় উপাধ্যক্ষ নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞপ্তি মূলে গত বছরের ৮ অক্টোবর উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ নির্বাচনী পরীক্ষা কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ (ডি.জি প্রতিনিধি)‘র কার্যালয়ে অনুষ্টিত হয়। দুইজন সহকারী অধ্যাপকের জুনিয়র হওয়া সত্ত্বেও এ প্রতিষ্টানের আরবি প্রভাষক মোহাম্মদ আক্কাসকে নিয়োগ প্রদানের সুপারিশ করেন নিয়োগ কমিটি। সাজানো নিয়োগ অনুমোদনের মিটিং আহ্বান করলে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সালেহীন তানভীর গাজী ২০১৬ সালের ১৮ নভেম্বর নির্বাহী আদেশে (স্মারক নং-উনিঅ/কুতুব/১৬) সু-নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে নিয়োগ অনুমোদনের সুপারিশ স্থগিত করে নিয়োগ বাতিল করেন।

বিগত ২০০৮ সালে সাবেক স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা বাদী হয়ে চরিত্রহীন মোহাম্মদ আক্কাসের বিরুদ্ধে কক্সবাজার নারী ও শিশু আদালতে নারী নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- সি.আর ১২৮/২০০৮। নৈতিকতার চরম পদস্খলনের কারনে ২০১০ সালের ১৯ এপ্রিল বিজ্ঞ আদালত উক্ত মামলায় ৫ বছর সশ্রম কারাদন্ড ও পঞ্চাশ হাজার (৫০,০০০) টাকা অর্থ দন্ডে দন্ডিত করেন। এ মামলায় তিনি অনেক দিন কারা ভোগ করেন।

এছাড়া ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত মাওলানা সাঈদীর রায়কে বিরোধীতা করে সারা দেশে যে নাশকতা মূলক তান্ডব চালানো হয় তারই ধারাবাহিকতায় মোহাম্দ আক্কাসের নেতৃত্বে কুতুবদিয়া উপজেলায় বিভিন্ন সরকারি অফিস ও আওয়ামীলীগের কার্যালয়ে ব্যাপক ভাংচুর এবং লুটপাট চালানো হয়। এঘটনার দায়েও তার বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়। যার মামলা নং- জি.আর ৭৫/২০১৩। মামলাটি (স্পেশাল ট্রাইবুনাল ১৯২/২০১৫)

বর্তমানে কক্সবাজার জেলা অতিরিক্ত জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। নিয়োগের ৬ মাস মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পরও গত ১৯ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে বিধি বহির্ভূত ভাবে নিয়োগ বাণিজ্য করে চরিত্রহীন ওই বিতর্কিত ব্যক্তিকে নিয়োগ দেন গভর্ণিং বডি। এই নিয়োগ ও যোগদান অনুমোদন রেজুলেশনে গভর্ণিং বডির অনেক গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের উপস্থিতি এবং স্বাক্ষর নেই।

এ বিষয়ে কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএও) সুজন চৌধুরী জানান, বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্তপূর্বক খুব শীঘ্রই প্রতিবেদন প্রদান করা হবে।